দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে এই ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র। ওই বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। লক্ষ্য ছিল, এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে আধুনিক ডিজিটাল সেবা ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছে দেওয়া, যেন এসব প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞানভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, তৃণমূলের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিকে যুক্ত করার জন্য এটা একটা হাব। ২০১৮ সালে আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো ইউডিসি ও ডাক বিভাগকে সক্রিয় করা।’ তিনি আরও বলেন, আমার তৈরি সার্ভিসের জন্য ডেলিভারি পয়েন্ট দরকার। পোস্ট ই-সেন্টার ও ইউডিসি সেই ডেলিভারি পয়েন্ট হতে পারে। ইউডিসিতে কিছু সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর কোনও নীতিমালা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও রয়েছে। কোনও টেকসই মডেল নেই। এর জন্য সময় লাগবে তবে যে সাপোর্টটুকু লাগবে, তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, বেশিরভাগ সেন্টারের কানেক্টিভিটি (ইন্টারনেট সংযোগ) নেই। মোবাইল ইন্টারনেটের মডেম দিয়ে কাজ চালানো হয়। এসব সমস্যা দূর করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রার শুরুতে ইউডিসির ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এগুলো যদি না হতো তাহলে আজকে ডেলিভারি পয়েন্ট হিসেবে এগুলোকে চিহ্নিত করা যেত না।
জানা গেছ, দেশের ৪ হাজার ৪৫৪টি ইউনিয়নে ইউডিসি, ৩২৫টি পৌরসভায় পৌর ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি) ও সিটি কর্পোরেশনে ৪০৭টি নগর ডিজিটাল সেন্টার (সিডিসি) স্থাপন করা হয়েছে। ইউ ডি সি র সমন্বয়কারী ও এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) কর্মকর্তা পারভেজ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউডিসি থেকে বর্তমানে ১১৬ ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সেবা তালিকায় যুক্ত হয়েছে ই-কমার্স এজেন্ট ব্যাংকিং। এরই মধ্যে ৩ হাজার ইউডিসিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। অন্যদিকে ৪৩৮টি ই-কমার্স সাইট যুক্ত হয়েছে ইউডিসিতে। ফলে এখন গ্রামে থেকেই শহরের পণ্য কেনা যাচ্ছে।’ তিনি জানান, বছরে সোশ্যাল সেফটিনেটের ৫৪ হাজার কোটি টাকা ইউডিসির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। বর্তমানে দেশের পাঁচটি জেলায় এই প্রকল্পের পাইলটিং হচ্ছে। ইউডিসির উল্লেখযোগ্য সরকারি সেবার মধ্যে রয়েছে জমির পর্চা, জীবন বীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারি ফরম, পাবলিক পরীক্ষার ফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ ইত্যাদি। বেসরকারি সেবার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, প্রতিটি ইউডিসিতে দু’জন উদ্যোক্তা কাজ করেন— একজন নারী, একজন পুরুষ। ইউডিসির কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা ই-গভ. ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেলা ই-গভ. ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে তদারকিসহ ইউডিসি টেকসইকরণের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস